যাদবপুর মানে অরাজকতা নয়

ছাত্র আন্দোলনের সেকাল–‌একাল। এই শিরোনামে কত বই যে লেখা হয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই। কেউ কেউ দেখাতে চান, আমাদের সময় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠত। এখন সেই আন্দোলন একেবারেই নিস্তেজ। কেউ কেউ আবার বোঝাতে চান, আমরা জঙ্গি ছাত্র আন্দোলন করতাম না। পড়াশোনার পরিবেশ ছিল। সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখাটাই ছিল আমাদের আন্দোলন।

সময় বদলায়। আন্দোলনের অভিমুখ বদলায়। সে যুগে ছিল দেওয়ালে সাঁটানো পোস্টার। এ যুগে আছে সোশ্যাল মিডিয়া। সে যুগে ছিল ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী, এ যুগে আছে ট্রোলিং বাহিনী। একটা সময় আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল প্রেসিডেন্সি কলেজ বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এখন বারবার শিরোনামে উঠে আসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

কোনও সন্দেহ নেই, দেশের অগ্রগণ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে যাদবপুর অন্যতম। বছরের পর বছর একঝাঁক উজ্জ্বল ছাত্র–‌ছাত্রী বেরিয়ে আসেন এই যাদবপুরের ক্যাম্পাস থেকে। নিজেদের মেধা, মননের জোরে ছড়িয়ে পড়েন সারা বিশ্বে। যাদবপুরের গৌরবের মুকুটে যুক্ত হয় একটার পর একটা উজ্জ্বল পালক। সেই মেধার স্রোত এখনও বহমান। কিন্তু গত কয়েকবছরে যাদবপুর বারবার শিরোনামে এসেছে অশান্তি ও হিংসার কারণে। কখনও ‘‌হোক কলরব’‌কে ঘিরে উত্তাল। কখনও র‌্যাগিং নিয়ে তোলপাড়। কখনও শিক্ষামন্ত্রীকে বিক্ষোভ ও হুমকি–‌পাল্টা হুমকির বন্যা।

ছাত্রদের অনেক দাবিই নিঃসন্দেহে যুক্তিযুক্ত। তা নিয়ে আন্দোলন হতেই পারে। কিন্তু সেই আন্দোলনকে ঘিরে অরাজকতা তৈরি হবে কেন, এটা ছাত্র সমাজকেও ভাবতে হবে। যাদবপুর মানে শুধু লেখাপড়া নয়। অনেক নেতিবাচক প্রচারও ছড়িয়ে যায় জনমানসে। দূরবর্তী জেলার কোনও অভিভাবক পরম নিশ্চিন্তে নিজের সন্তানকে পাঠাতেন যাদবপুরে পড়তে। তাঁদের মনে কোথাও একটা সংশয় তৈরি হচ্ছে। এমন আবহ তৈরি হবে কেন?‌ যাদবপুর মানেই হিংসা, মারামারি, অরাজকতা— এমন প্রচারে কার ক্ষতি হচ্ছে?‌

শিক্ষাঙ্গনে মুক্ত ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে, এটাই কাম্য। বিক্ষোভের নামে কাউকে হেনস্থা করা কাম্য নয়। পাশাপাশি প্রশাসনকেও নমনীয় হয়ে ছাত্রদের দাবি শুনতে হবে। ছাত্ররা শত্রু নয়, এটা অনুভব করতে হবে। যেগুলো মানা সম্ভব, মানতে হবে। ছাত্রদের একটা দুটো নায্য দাবি মেনে নেওয়া মানে নতিস্বীকার নয়। পাশাপাশি ছাত্রদেরও আরও সহিষ্ণু হতে হবে। সুস্থ আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার পেছনে তাদেরও সক্রিয় ভূমিকা থাকুক। চিৎকার বা হই হট্টগোল নয়, যুক্তিপূর্ণ সুস্থ আলোচনাতেই বেরিয়ে আসুক সমাধানের রাস্তা। কারও সঙ্গে কারও যুদ্ধ নয়। একটা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে চলে সবার মিলিত চেষ্টায়। যার যেখানে ত্রুটি, আলোচনাতেই তা শুধরে নেওয়া সম্ভব। সেই পরিবেশ ফিরে আসুক। আবার মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়াক যাদবপুর।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.