একটি কাগজ ও বদলে যাওয়া দৃষ্টিকোণ

হরিশ মুখার্জি

বাঙালি এখন আর নিজের কানে হাত দেয় না। সে কাকের পেছনেই ছোটে। হঠাৎ, এমন দুটো লাইন পড়ে একটার সঙ্গে আরেকটা মেলানো কঠিন। যাঁরা মেলানোর, তাঁরা ঠিক মেলাতে পারেন। সেই পুরনো প্রবাদ, কাকে কান নিয়ে গেছে শুনে কানে হাত না দিয়ে কাকের পেছনে ধাওয়া করা।

ফেসবুক জমানায় এটা আরও বেড়েছে। পুরো পোস্ট বা লেখা পড়ার দায় নেই। যা হোক একটা মন্তব্য করে দিলেই হল। চটিচাটা, তৃণমূলের দালাল এইসব শব্দবন্ধগুলো কমেন্ট বক্সে চোখ রাখলেই ধরা পড়ে। অনেক আগেই খবর ছড়িয়েছিল, এই সময় কাগজ কিনে নিচ্ছেন ভাইপো। খবরটা একেবারে মিথ্যেও নয়। ভাইপো মানে, সরাসরি ভাইপো নয়। তাঁর পেটোয়া কেউ। সঙ্গে কয়েকটা ভুলভাল নাম জড়িয়ে কিছুটা গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।

সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, এই কাগজ তৃণমূলের মুখপত্র হয়ে উঠবে। নির্লজ্জভাবে পিসি আর ভাইপোর গুণকীর্তন করে যাবে। সেটা ভাবাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। এমন এমন প্রতিবেদন এখানে প্রকাশিত হচ্ছে, মনেই হবে না, এর পেছনে ভাইপো থাকতে পারে। তৃণমূলের বিপক্ষে যাবে, এমন খবর রোজই বেশ কয়েকটা থাকছে। কোনও খারাপ কাজকে জোর করে জাস্টিফাই করার চেষ্টাও নেই। আরজি কর ইস্যুতে এমন এমন খবর হয়েছে, যা অন্য কাগজগুলিকে দশ গোল দিয়েছে। তারা হয় এই খবর পায়নি, অথবা পেলেও ছাপার সাহস দেখায়নি। কিন্তু এই সময় সেইসব খবরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই ছেপেছে।

এই পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু বিগড়ে গেল কার্নিভালের দিন। সেদিন মুখ্যমন্ত্রীর কার্নিভালের থেকেও বেশি গুরুত্ব পেয়ে গেল দ্রোহের কার্নিভাল। ব্যস, আর যায় কোথায়!‌ শোনা যায়, তারপর থেকেই বিজ্ঞাপন বন্ধের ফতোয়া জারি হয়ে গেল। সেই থেকে এই কাগজে আর কোনও সরকারি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় না। ভাইপোর ঘনিষ্ঠ লোক কাগজের মালিক, তারপরেও সেই কাগজের ওপর দিদিমণই এত চটেছেন কেন?‌ জটায়ু থাকলে বলতেন, হাইলি সাসপিসিয়াস।

পরে কী সমীকরণ তৈরি হবে, বলা মুশকিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই বিজ্ঞাপনের দরজা খোলেনি। কাগজের সুর বদলেরও তেমন ইঙ্গিত নেই। মাঝখান থেকে ভাইপোর সেই ঘনিষ্ঠ আইনজীবী আইনি ব্যাপারে আরও কোণঠাসা হলেন। সরকারি মামলায় একসময় তিনিই ছড়ি ঘোরাতেন, এখন রাজ্য আর তাঁকে ভরসা করে না।

কিন্তু ফেসবুকের বামেদের এসব ভাবতে বা বুঝতে বয়েই গেছে। তাঁদের কাছে হিসেবটা পরিষ্কার, ভাইপো কিনেছে মানেই পিসির চটিচাটা। কী খবর বেরোলো, বিজ্ঞাপন আসছে কিনা, বা না এলে কেন আসছে না,এসব ভাবতে বা বুঝতে তাঁদের বয়েই গেছে। তাঁরা মহাবিপ্লবী। অতএব চটিচাটা বলতে পারলেই তাঁদের যত আনন্দ।

বিষয়টা নিছক একটি কাগজের এডিটোরিয়াল পলিসি নয়। এর রহস্য আরও জটিল। ভাবুন, ভাবুন, ভাবা প্র‌্যাকটিস করুন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.